স্বদেশ ডেস্ক:
কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় জো বাইডেন এলে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে এবং ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে যাবে ওয়াশিংটন। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরের কিছু বেশি সময় পর সেই কথার ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা বেসামরিক পরমাণু প্রকল্পে তেহরানকে সহযোগিতা করার জন্য অন্য দেশগুলোকে সুযোগ করে দিতে তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ভাবছে। গতকাল এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ইরান ও বিশ^ শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি সম্পন্ন হয়। সেই সময় এটিকে ঐতিহাসিক চুক্তি আখ্যা দিলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এতে চুক্তিটি মুখ থুবড়ে পড়ে। এর পর জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই আলোচনা চলছিল, ক্ষমতায় এলে ইরানের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে বা লাঘব করা হবে।
এর পর থেকে পরমাণবিক চুক্তিতে ফেরার লক্ষ্যে ইরানের সঙ্গে কৌশলগত চুক্তিতে ফেরে বাইডেন প্রশাসন। সেটি প্রায় চূড়ান্ত পর্বে রয়েছে। চীন, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, এই ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত ওই পরমাণু চুক্তিটির আনুষ্ঠানিক নাম জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ)। ওই চুক্তিতে ফেরার জন্য কৌশলগত আলোচনা প্রয়োজন।
খবরে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসনের নতুন এই পদক্ষেপের কারণে রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো তেহরানের বেসামরিক পরমাণু প্রকল্পে কাজ করতে পারবে। এতে পরমাণু স্থাপনায় অস্ত্র তৈরি ইরানের জন্য কঠিন হবে। কিন্তু এমন ছাড়ের বিষয়টি ২০১৯-২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসন বাতিল করেছিল। মার্কিন প্রশাসন দাবি করছে, তাদের এই ছাড়ের কারণে পারমাণবিক চুক্তি পুনরায় সচল করা সহজ হবে।
কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় তেহরান বলছে ‘যথেষ্ট নয়’। এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহাইন বলেছেন, ভালো পদক্ষেপ কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। ইরানের সংবাদ সংস্থা ‘ইসনা’কে তিনি বলেন, কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সদিচ্ছার বহির্প্রকাশ। কিন্তু তাদের জানা উচিত কাগুজে আলোচনা খুব একটা পর্যাপ্ত নয়।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে লাগাম টানার বিনিময়ে দেশটির ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তে হওয়া পরমাণু চুক্তিটি পুনরুজ্জীবনে গত বছরের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে আট দফা পরোক্ষ আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী দফার আলোচনা কবে শুরু হবে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও আগামী সপ্তাহ থেকে এই আলোচনা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে জেসিপিওএ থেকে সরিয়ে এনে ফের ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানও চুক্তিতে থাকা শর্তগুলো একে একে লঙ্ঘন করা শুরু করে। পশ্চিমা কূটনীতিকদের আশঙ্কা, তেহরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ এখন এমন জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে, যেখান থেকে দেশটির ২০১৫ সালের চুক্তির শর্ততে ফিরতে পারার সম্ভাবনা ক্ষীণ।